স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৯ পালন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘ভয়াবহ আগস্ট’ শিরোনামে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক জনাব প্রণব সাহা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. রিয়াজ আহম্মদ।
স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. আবদুল মজিদ বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ও তারই চেতনার ফল আজকের সোনার বাংলাদেশ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে আজকে আমরা আয়োজন করেছি ভয়াবহ আগস্ট শিরোনামে সেমিনার। আজকের সেমিনারের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে অনেক জানা-অজানা কথা জানতে পারব।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে জনাব প্রণব সাহা বলেন, বর্ষপঞ্জির কালো পৃষ্ঠার নাম আগস্ট মাস। আগস্ট এলেই বাঙালি শোকে মুহ্যমান হয়, আতংকও ঘিরে ধরে আমাদের। আগস্ট মানেই কয়েকটি ভয়াবহ ঘটনার বার্ষিকী পালন। এই মাসেই তিন-তিনটি ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো দেশকে। ১৫, ১৭ আর ২১ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোকাবহ এই কালো দিবসে ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ ছিল এই হত্যাকান্ড। তাই তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিরোধ আসেনি কোথাও থেকে। এরপর ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় কেঁপে উঠেছিল সারাদেশ, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ভেসেছিল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের রক্তে। আর ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট একই সাথে ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। আর এই তিনটি ঘটনার কারণেই আমাদের কাছে এখন আগস্ট মাস মানেই এক ভয়াবহ আগস্ট। এজন্য এই ভয়াবহ আগস্টেই জাতিকে শপথ নিতে হবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই চেতনার দেশের জন্য কাজ করার।
সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে জনাব মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা না, বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে হত্যা করা। এই বর্বরতম হত্যাকাণ্ড জাতিকে কলঙ্কিত করেছে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১৭ই আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা এগুলো শুধু একটা হত্যাকাণ্ড নয়, এগুলো হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র। একটা দেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য এই ষড়যন্ত্র। এইসব হামলাযজ্ঞের সাথে দেশি-বিদেশি অনেক চক্র জড়িত ছিল। ভয়াবহ আগস্টের এই চক্রান্তের পেছনে যারা জড়িত তারা শুধু এই স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রু নয়, এরা বাঙালি জাতির শত্রু। তাই এইসব চক্রান্তকারীদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে।
অধ্যাপক আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বঙ্গুবন্ধু কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। কিন্তু বঙ্গুবন্ধুর কন্যা সরকার প্রধান হয়েও কোনো রকম ক্ষমতার প্রয়োগ ছাড়াই ১৫ই আগস্টের খুনিদের বিচার সাধারণ মানুষের মতোই করেছেন। ইতোমধ্যে হত্যাকারীদের কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এবং আরো অনেকের বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বক্তব্যে ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি বলেন, প্রতিবছর ১৫ই আগস্ট আসে বাঙালির হৃদয়ে শোক আর কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। পুরো জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে। জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সভাপতি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. রিয়াজ আহম্মদ বলেন, বাংলাদেশ ও বাঙালির সবচেয়ে হদয়বিদারক ও শোকের দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড বঙ্গবন্ধুকে মুছে দিতে পারেনি। বাংলার মানুষ তাঁকে আগে যেমন ভালোবেসেছে আজও তাঁকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় এক নাম। বাঙালির প্রেরণার নাম। যিনি না থেকেও বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু হয়ে।